Wednesday 20 December 2023

লেভ ইয়াসিন কার্তিকদা



লেভ ইয়াসিন কার্তিকদা

     কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল। 

     আমাদের কার্তিকদা।

    আশে পাশের পাড়া সহ আমাদের পাড়ায় যত ফ্ল্যাট হয়েছে, সেইগুলো সেকালে খেলার মাঠ ছিল, সবগুলো মাঠেই খেলা হত। আমাদের ছোটবেলায় আমরা প্রায় সব কটা মাঠেই খেলেছি। খেলোয়ার হিসেবে কোনো পেলু ছিলাম না, কিন্তু আমাদের মধ্যে খেলাধুলার চল ছিল। সবাই অন্তত খেলা ধূলো করত। পাড়ায় খেলার চল ছিল, গরমকালে ফুটবল, শীতকালে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, গাদি, খো খো  ইত্যাদি। ম্যাচ দেওয়া হত, টিম এসে খেলত, গিয়ে খেলা হত। পাড়ায় পাড়ায় নাম করা টুর্নামেন্ট হত। অন্যান্য সব পাড়ার মত আমাদের পাড়ায় ফুটবল খেলা চলত, টুর্নামেন্ট হত। ভালো স্ট্রাইকার ছিল, গোলকিপার ছিল। টুলুদা, ঝন্টুদার মত অনেকেই অকালে চলে গেছে। টুলুদা, ঝন্টুদা দারুণ স্ট্রাইকার ছিল। টুলুদার ব্যাকভলি, ঝন্টুদার হেড এখনও চোখে লেগে আছে। আর গোলকিপার অসিতদা, কার্তিকদা। কার্তিকদার চেহারার জন্য পাড়ায় তখন লেভ ইয়াসিন নামে খ্যাতি ছিল।

  তারপর যা হয়। বয়স বাড়ে, মাঠ কমে। সি আই টি-র জমিগুলি একে একে কো-অপারেটিভের গল্প দেখিয়ে ফ্ল্যাট হয়ে গেল। এক একটা মাঠের নাম পালটে এপার্টমেন্টের নামে এখন শোভা পায়। অঞ্চলের ইতিহাস ভূগোল ধীরে ধীরে পালটে গেল। লোমহীন ঘেয়ো কুত্তার মত কয়েকটা ঘাসহীন ধুলোবালি ভর্তি মাঠ পরে রইল। ইট-বালি-কংক্রিট-বাঁশের কাজের ফাঁকে যখন ফাঁকা থাকে, তখন খেলে যায় সবুজ বাচ্চাগুলো।

   এরপর জীবনের বাধ্যবাধকতায় কাজের মধ্যে ঢোকা গেল। তখন বিধাননগর রোড স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে শিয়ালদহ গিয়ে বজবজ লোকাল ধরতে হত। তখন প্রায় শিয়ালদহে ট্রেন থেকে একসঙ্গে নেমে দক্ষিণ শাখা অবধি গল্প করতে করতে যাওয়া হত কার্তিকদার সঙ্গে। তখন জানি কার্তিকদা রেলে কাজ করে। তারপর আমি ওই কাজ ছাড়ার পর আর নিয়মিত দেখা হত না। দেখা হত পাড়ায়।

       এখন প্রায় রবিবার সকালে দেশবন্ধু পার্কে আমাদের দেখা হয়। এর মধ্যেই এক ব্যাপার ঘটে গেছে। প্রায় সবকটা নামকরা কাগজে কার্তিকদার নাম লেখা হয়েছে। ইন্টারনেটের দৌলতে সোশ্যাল মিডিয়ার নানা মাধ্যমে খবরটি ভাইরাল হয়েছে।

     


ছবি সৌজন্যে: আনন্দবাজার পত্রিকা

কার্তিক দা মেট্রো রেলের গাড়ির চালক হিসেবে অনেকদিন কাজ করেছে। শেষে তার কাজ ছিল মেট্রো রেলের জি এমের গাড়ি চালক হিসেবে। ছোটবেলার গোল কিপারের দক্ষতার মত সেই কাজেও অত্যন্ত সফল ছিল কার্তিকদা। লেভ ইয়াসিনের মত সূক্ষ্মতায় গাড়ি চালিয়ে গেছে সে। গত ৩১শে অক্টোবর ছিল কার্তিকদার কাজের শেষ দিন। মেট্রো রেল ভবনে বিদায় সম্বর্ধনা দেওয়া হয় কার্তিকদাকে। কিন্তু সব থেকে চমকে দেন মেট্রো রেলের জি এম (জেনারেল ম্যানেজার) পি উদয়কুমার রেড্ডি। অনুষ্ঠান শেষে নিজের গাড়ির পেছনের দরজা খুলে ধরেন তিনি তার দীর্ঘদিনের ড্রাইভারের জন্য। বলে উঠলেন, আজ আপনি পেছনের সিটে, আমি ড্রাইভার। নিজে স্টিয়ারিং ধরে প্রতিদিনের চলার রাস্তার উল্টোদিকে চালিয়ে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে দিলেন কার্তিকাদা কে কার্তিকদার পাড়ায়, তেলেঙ্গাবাগানে।

     সময় বদলেছে, আমরা এখন বেঁধে বেঁধে থাকি না। পাড়ার পুরনো মানুষ কমে যাচ্ছে। কেউ কোন খবরও রাখে না। আমার অঞ্চলের অনেক মানুষই দেখলাম খবরটা জানত না। তাই তাদের জানার জন্য এই লেখা। নিচে যতগুলি কাগজের পেলাম লিঙ্ক দিলাম।

 

আনন্দবাজার পত্রিকা

https://www.anandabazar.com/west-bengal/kolkata/gm-of-kolkata-metro-rail-drives-for-his-driver-on-retirement-day-dgtl/cid/1471319

 THE STATESMAN

https://www.thestatesman.com/bengal/farewell-gesture-metro-gm-drives-to-drop-driver-home-1503236937.html

 X

https://twitter.com/SeemaSengupta5/status/1720505743336702256


কয়েক মাস ধরেই অনেকগুলি ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু কিছুই লেখা হয় নি। তাই ভাবলাম এক এক করে লিখে ফেলি। আজ একটা।